স্বেচ্ছাসেবা ও স্বেচ্ছাসেবী

স্বেচ্ছাসেবা বলতে আমরা বুঝি কোনকিছু পাবার আশা ব্যতিরেকে স্বেচ্ছায় অন্যের সেবা করা। আরও সহজভাবে “ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো” এই প্রবাদ বাক্যটি স্বেচ্ছাসেবার সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কিত মনে হয়। মানুষ যখন নিজের অর্থ, শ্রম, সময় খরচ করে অন্যের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করে তখন আমরা তাকে স্বেচ্ছাসেবা এবং যিনি বা যারা এই কাজ করেন তাকে বা তাদেরকে স্বেচ্ছাসেবক বলে থাকি।
স্বেচ্ছাসেবার এক নতুন ধারা উন্মোচিত হয়েছে বর্তমান তরুণ সংগঠকদের হাত ধরে। একটা সময় পর্যন্ত আমরা স্বেচ্ছাসেবাকে শুধুমাত্র অন্যের উপকারের জন্য ব্যবহার করলেও স্মার্ট তরুণরা একে নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করার কৌশল রপ্ত করেছেন। এখন স্বেচ্ছাসেবা মানে শুধু মানুষের জন্য কাজ করা নয়, নিজের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেকে পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুত করার এক একটি প্ল্যাটফর্ম। লিডারশীপ বা নেতৃত্বচর্চা, যোগাযোগের দক্ষতা বা কমিউনিকেশন স্কিলসহ নানা রকম দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তরুণরা এখন স্বেচ্ছাসেবী কাজের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন। একদিকে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা অন্যদিকে নিজেকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারের জন্য প্রস্তুত করার এই সুবর্ণ সুযোগ এখন প্রতিটি তরুণের আগ্রহের তুঙ্গে। বিভিন্ন আঞ্চলিক, ক্যাম্পাস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সংগঠনে কাজ করে তরুণরা তাদের নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছেন এবং নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করছেন। তবে যে বিষয়টি অনেক বেশি আনন্দের তা হলো, এখন ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও স্বেচ্ছাসেবার প্রতি আগ্রহী হয়েছে। সামাজিক বাঁধা ও কুসংস্কার উপেক্ষা করে সবক্ষেত্রে নারীদের সমান বিচরণের আরেকটি ক্ষেত্র হিসেবে স্বেচ্ছাসেবাও এখন উদাহরণযোগ্য।
সমাজের যে মানুষগুলো স্বাভাবিক সুযোগ সুবিধা পেয়ে বেড়ে উঠছে তাদের প্রত্যেকেরই উচিত সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমি যে বিষয়গুলো জানি তা অন্যকে জানানোর মধ্যেই জানার স্বার্থকতা। স্বেচ্ছাসেবকরা সেই কাজটিই করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। মানুষকে শুধু সাহায্য করা নয়, তাদের অধিকার, কর্তব্য সম্পর্কেও ধারণা দিচ্ছেন এই আলোকিত তরুণেরা। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বেচ্ছাসেবার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা প্রকৃত শিক্ষা তথা মানবতার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে বলেই হয়তো সমাজের প্রতি তাদের দায়বোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে তাদের সুন্দর কাজের মাধ্যমে। স্বেচ্ছাসেবার মত মহতী কার্যক্রম যুগে যুগে চলে এসেছে। কখনও ব্যক্তি পর্যায়ে, কখনো ছোটখাটো সাংগঠনিক পর্যায়ে কিংবা বৃহৎ পরিসরে। মাদার তেরেসার জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই তিনিও স্বেচ্ছাসেবার প্রতিমূর্তি ছিলেন যদিও উনার কাজ নিয়ে অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। কিন্তু কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না উনার অবদান। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও উনার কাজের স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন। উনার জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে ভালো কাজের প্রসংশা এবং সমালোচনা উভয়ই থাকবে কিন্তু দমে গেলে চলবে না। মানবতার বার্তাবাহক হিসেবে ভাল ও মানবিক কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।